হবিগঞ্জ, ১৮ মে : সোনালু, সোনাইল, সোঁদাল ইত্যাদি পোষাকী নাম থাকলে গ্রামাঞ্চলে পরিচিত বাঁদরলাঠি নামে। এর ফুল, ফল ও পাতা বানরের খুব প্রিয় এবং ফল লাঠির মতো বলেই হয়তো বাঁদরলাঠি নাম হয়েছে। এর সোনালী আভায় মুগ্ধ হয়ে রবিঠাকুর নাম দিয়েছিলেন অমলতাস। ইংরেজিতে বলে গোল্ডেন শাওয়ার আর উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Cassia fistula।
যাই হোক, নামে কিবা আসে যায়, সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ কে না হয়! গ্রীষ্মের প্রচণ্ড খরতাপে হালকা বাতাসে দোল খাওয়া সোনালু ফুলের অপূর্ব রূপ একটু সময়ের জন্য হলেও কেড়ে নেয় ক্লান্তি। সোনালু আমাদেরই এ অঞ্চলের গাছ, আদি নিবাস হলো ভারত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশ। সোনালু পর্ণমোচী উদ্ভিদ, শীতে পাতা ঝরে যায় এবং এবং বসন্তের শেষে ফুল কলি ধরার পূর্বে গাছে নতুন পাতা গজায়। সোনালু গাছ মাঝারি আকারের হয়ে থাকে। এর উচ্চতা প্রায় দশ/পনেরো ফুট পর্যন্ত হতে পারে।
শুধুই কি রূপ? সোনালুর রয়েছে ওষধি গুণ। অন্ত্রের সমস্যায় ফলমজ্জা পানিতে সেদ্ধ করে ছেঁকে সকালে ও বিকালে পান করলে কোষ্ঠ্যকাঠিন্যও দূর হয়। ব্লাডপ্রেসারে নাক দিয়ে রক্ত পরলে সোনালুর ফলমজ্জা পানিতে মিশিয়ে চিনি বা মধু দিয়ে পান করলে এ সমস্যার সমাধান হয়। আর পাতা তো ব্যাথা নাশক হিসেবে সুপরিচিত। সোনালু কাঠের রং ইটের মতো খয়েরি লাল। ঢেঁকি, সাঁকো বানানোর কাজেও এ গাছের কাঠ ব্যবহার করা হয়।
একসময় গ্রামে অনেক সোনালু গাছ চোখে পড়তো। এখন হাতেগোনা কিছু গাছ দেখা যায় পথে প্রান্তরে। দিন দিন কমে আসছে সোনালুর সংখ্য। আশার কথা বৃক্ষপ্রেমিরা আবারো সোনালুকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন রাস্তার পাশে কিংবা প্রতিষ্ঠানের আঙিনায়। আগামীদিনে নিশ্চয়ই শহর এবং গ্রামে সর্বত্র সোনালুর স্বর্ণালী আলোকছটা হৃদয় ভরিয়ে দিবে প্রকৃতিপ্রেমিদের।
লেখক:- বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ, বৃন্দাবন সরকারি কলেজ, হবিগঞ্জ।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan